ন্যূনতম কর আইনকে তিনি একেবারেই কালো আইন বলছেন। এ বিষয়ে সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রহমান খান বলেন, ন্যূনতম কর নিয়ে অনেক সমালোচনা শুনেছি। সত্যি বলতে, এটি একটি কালো আইন, যার স্বীকৃতি আসতেই হবে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে করের ভিত্তি মূলত মুনাফার ওপর হওয়া উচিত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মিনিমাম কর নির্ধারণের মাধ্যমে করের হার ঠিক রাখা হচ্ছে, যা নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, অর্থাৎ কর আহরণ আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর হলে, আমরাও বাস্তবায়ন সহজ করতে পারব। বর্তমানে আমরা ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে বেশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ, যদি ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে করের হার কম করা না হয়, তাহলে রাজস্ব আদায় কঠিন হয়ে পড়বে।
সংলাপে বক্তারা বলেন, করছাড়ের প্রবণতা বাড়ার কারণে দেশীয় অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনুযায়ী কর-জিডিপি অনুপাত অপর্যাপ্ত রয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, আমরা অনেক করছাড় দিচ্ছি, কারণ আমাদের বড় দেশ, বড় কর্মীসংখ্যা রয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির স্বার্থে এই করছাড় অব্যাহত রয়েছে। তবে এর ফলে করের জিডিপি অনুপাত বাড়ছে না। তিনি ধারণা দেন, অনেক সময় ট্যাক্স হিল্ড, ট্যাক্স এক্সেম্পশন দেওয়ায় মানুষ এই খাতগুলোতে বেশি মনোযোগ দেয় না। এটা চলতে থাকলে, কর-জিডিপি অনুপাত ভবিষ্যতেও বাড়বে না।
চলমান ঋণের বোঝা দানা বাঁধছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দেশের জন্য দরকারি অর্থ সংগ্রহে ব্যর্থ হলে, পরবর্তী প্রজন্মের ওপর ঋণের বোঝা চাপবে, বলে সতর্ক করেন। ইতিমধ্যে পাকিস্তানের কর-জিডিপি অনুপাত বহু নিচে নেমে গেছে—গতবছরে ছিল ৭.৪%, এখন মাত্র ৬.৬%। এই হার অনুযায়ী, দেশের উন্নয়ন ও ঋণের সুদ পরিশোধ কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই দক্ষ ও স্বচ্ছ কর ব্যবস্থা সৃষ্টি অপরিহার্য বলে তিনি মনে করেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, তিনি একটি জাতীয় অটোমেটেড কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এতে সবকিছুই ডিজিটাল পদ্ধতিতে হবে, ম্যানুয়াল পদ্ধতি যেন আর চালু না থাকে। এতে ভ্যাট ও কর রিটার্ন দ্রুত ও সঠিকভাবে নেওয়া সম্ভব হবে। পাশাপাশি অডিটের মান উন্নয়নে জোর দিচ্ছেন, যাতে প্রকৃত ছবি স্পষ্ট হয়। বর্তমানে অডিট ম্যানুয়াল পদ্ধতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে অডিটের জন্য নিরপেক্ষতা ও ঝুঁকি ভিত্তিক পদ্ধতি প্রবর্তন করা যায়। এর মাধ্যমে করদাতা ও কর কর্মকর্তাদের মধ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
করদাতাদের জন্য কর বৃদ্ধি ও রিফান্ড প্রসেসের অটোমেটেড ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনাও তিনি ব্যক্ত করেন। তার মতে, করের আওতা বাড়লে কর হার ও ভ্যাট হার কমানো সম্ভব হবে, আর রিফান্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালানো জরুরি।
প্রসঙ্গত, এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮২% ব্যবসায়ী বর্তমানে ব্যবহৃত কর হারকে ‘অন্যায্য’ বলে মনে করেন এবং ব্যবসার উন্নয়নে এটি বাধা সরিষা। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা মত দিয়েছেন, কর কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নেই ও দুর্নীতি প্রচলিত সমস্যা। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী নিয়মিত কর দাবিকে কেন্দ্র করে কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। আশা করি, এই পরিস্থিতি উন্নত হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হবে।