শুক্রবার, ৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে কিছু দলের ধোঁয়াশা দূর করার আহ্বান সালাহউদ্দিনের

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, কিছু রাজনৈতিক দল ভোটের প্রস্তুতি ও নির্বাচনী রোডম্যাপের নামে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, যদি কোনও সন্দেহ বা বিভ্রান্তি থাকে, তাহলে আসুন আলোচনার মাধ্যমে তা মুক্ত করি। বিগত দিনগুলোর মতো ফাটল সৃষ্টি বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর মানসিকতা এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়; বরং ঐক্যবদ্ধভাবে আলোচনা করে সব অজুহাত দূর করতে হবে।

সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি এবং এই সংগ্রামের পথ অবশ্যই শান্ত, স্বচ্ছ ও জোরদার হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বপ্ন এমন এক বাংলাদেশ গড়ার, যেখানে গুমের শিকার হয়ে কেউ যেন আর রাস্তায় দাঁড়াতে না হয়। তার বিশ্বাস, জনগণের সচেতনতা ও সক্রিয়তার মাধ্যমে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব। ২৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য নেতারা, যারা গুমের শিকার পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে সংযোগ রেখেছেন।

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার উন্নয়ন ও স্বচ্ছতার দাবিতে কাজ করতে না পেরে অন্যায়ের স্বীকার করে আসছে। তিনি বলেন, অপরাধের জন্য তারা অতীতে ক্ষমা চায়নি; বরং একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালিয়েছে—গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের প্রতি দোষারোপ। এ প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্ট করেন, জনগণ কখনো এই ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবে না।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী রোডম্যাপের বিষয়ে কিছু দল ধোঁয়াশা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। তিনি আহ্বান জানান, এই সংশয় বা বিভ্রান্তি থাকলে আলোচনা করা উচিত, যাতে সবাই একে অন্যের মনোভাব বুঝে নিতে পারে। তাঁর বিশ্বাস, আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে অন্ধকার করেছে এমন বিভ্রান্তি দূর করা সম্ভব।

সভায় হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে গুমের শিকার ব্যক্তিদের অনেককে ফিরে পেয়েছেন। তিনি আশা করেছিলেন আরও অনেকের ফিরে আসা সম্ভব হবে, তবে সেটি এখনও সম্ভব হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে বলেছিলো, গুমের শিকারদের ফিরিয়ে আনবে, তাদের তথ্য দেবে, যাতে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এতদিন তালিকায় কিছুই জানা যায়নি।

গুম থেকে ফিরে আসা শায়রুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালের মার্চে তিনি গুমের শিকার হন। সেই সময় আরো চারজনের সঙ্গে পরিচয় হয়, তাদের মধ্যে তিনি ও আরেকজন ফিরে আসেন। বাকিরা এখনও নিখোঁজ। তিনি বলেন, আমাকে ফিরে পেয়ে আমি উপলব্ধি করেছি, আমাকে এবং অন্যদের গুম করেছিল যারা এখনো সরকারি চাকরিতে রয়েছে। আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলার সাজাও হয়েছে, যা আমাকে এখনো নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রাখে। আমি এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছি, কারণ আমার সঙ্গে থাকা তিনজন এখনো ফেরত আসেনি।

অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরে বিএনপির আন্দোলনের সময় রাজধানীর মুগদা থানার শ্রমিকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফজলুর রহমান কাজলকে আটক করে পুলিশ; এরপর তার মৃত্যুর খবর আসে। তার ছেলে সজল বলেন, তাদের বাড়ির চায়ের দোকান থেকে বাবাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে পল্টন থানায় চালান করে, আবার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারেও দেখা যায়। সেখানে গিয়ে তারা দেখেন, বাবার অবস্থা খুবই খারাপ। চিকিৎসা করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর সজল বলেন, বাবার ওপর দিন দিন নির্যাতন চালানো হত। তিনি আর্থিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন, কারণ তার বাবার সঙ্গে আর দেখা করতে পারেননি।