সোমবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে মরদেহ, ক্ষুধা ও মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হচ্ছে না

ইসরায়েলের অবিরাম হামলা, অবরোধ এবং চলমান দুর্ভিক্ষের কারণে প্রতিদিন গাজা উপত্যকায় মানুষের প্রাণহানি continue হচ্ছে। প্রতিদিনই ইসরায়েলের নিয়মিত বিমান হামলায় ও গোলাবর্ষণে অগণিত পরিবারের স্বজনেরা মৃত্যুর কোলে ঢলছে। কথিত ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংকলিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে অক্টোবর মাস থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৬৪ হাজারের বেশি মানুষ জীবন হারিয়েছেন। এমনকি মানবিক সহায়তা করতে গিয়ে অনেক ফিলিস্তিনি জীবন হারাচ্ছেন। বার্তাসংস্থা আনাদোলু এ তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬৪ হাজার ৪০০ জনে পৌঁছেছে। শনিবার পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ৬৪,৩৬৮ জন।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে আরও ৬৮ জনের মরদেহ। সেই সময়ে আহত হয়েছেন মোট ৩৬২ জন। এভাবে মোট আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৭ জনে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে বা রাস্তায় পড়ে আছেন, তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করলেও উদ্ধারকর্মীরা ব্যর্থ হচ্ছে।

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় মানবিক সহায়তা নেওয়ার জন্য গাজা গিয়েছিলো আরও ২৩টি ফিলিস্তিনি গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে, একই সময়ে আহত হয়েছেন অন্তত ১৪৩ জন। চলতি বছরের মে মাসের ২৭ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত সহায়তা নিতে গিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,০৩৮৫ জনের বেশি, এবং আহতের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে ১৭,৫৭৭।

অতিরিক্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ক্ষুধা ও অপুষ্টির কারণে মারা গেছেন আরও ৬ ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে একজন শিশু। এভাবে, অক্টোবর ২০২২ থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষুধা বা অপুষ্টিতে কষ্ট পেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮২ জন, যাদের মধ্যে ১৩৫ জন শিশু।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২ মার্চ থেকে গাজার সব সীমান্ত ক্রসিং সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এর ফলে প্রায় ২.৪ মিলিয়ন মানুষ বসবাসকারী এই সংখ্যালঘু অঞ্চলটি দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা জরিপে দেখা গেছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে ইতোমধ্যে খাদ্য সংকট দৃশ্যমান, আরও আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এই দুর্ভিক্ষ দ্রুত নেমে আসবে দক্ষিণের এলাকাগুলোতেও।

এছাড়া, ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল নতুন করে গাজায় হামলা শুরু করে। এ হামলায় এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৮২৮ জন নিহত ও ৫০ হাজার ৩২৬ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি কার্যত ভেঙে গেছে।

গাজার দখলে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুক্রবার প্রবেশ করেছে ৭০০তম দিন। দীর্ঘ এই যুদ্ধের ফলে পুরো ভূখণ্ড ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং মানুষের মধ্যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের অবস্থা তৈরি হয়েছে।

বিশ্ব আদালতও এই পরিস্থিতির দিকে নজর দিয়েছে। গত বছর নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পাশাপাশি, গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) মামলা অব্যাহত রয়েছে।