বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা পরিষদ, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও সদর বাজারের বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজ অর্থ সংকটের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সময়মত যেখানে বর্জ্য না সরালে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। পরিবেশের এসব দূষণজনিত কারণে দূর-দূরান্ত থেকে বাজারে আসা মানুষ, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বসবাসকারী কিছু হাজার মানুষ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। যদি দ্রুত বর্জ্য অপসারণের গাড়ি মেরামত বা নতুন গাড়ি কেনার ব্যবস্থা না হয়, তাহলে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে। এই ব্যাপারে আজ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের গোপনীয় সহকারী মোঃ আনোয়ার হোসেন পারভেজ জানান, এ জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা পরিষদে মোট ১৭টি দপ্তর ও ১৮টি পরিবার বসবাস করে। সদর বাজারে প্রায় এক হাজার দোকান ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে অনেক মানুষ কাজ করে। এ ছাড়া আরও প্রায় ২০০ পরিবার বসবাস করছেন এই এলাকায়। এখানে রয়েছে একটি হাসপাতাল, বেশ কয়েকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রতিদিন বাজার ও বিভিন্ন সরকারি কাজে আসা লাখো মানুষ এই সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আশপাশে ব্যবহৃত কাচামাল, আবর্জনা জমা করে রাখে। এই আবর্জনা জমাট বাঁধে গভীর গন্ধ সৃষ্টি করে এবং পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছে যায়। মূলত এই বর্জ্য স্থানীয় উপজেলা পরিষদ ও হাসপাতালের চত্বরে, সদর বাজারের অলিগলিতে ফেলা হয়, যেখানে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ চলাফেরা করে। এই আবর্জনা নদী ও খালে গিয়ে জমা হয়, যার ফলে নদী ও জলাধার মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। প্রতিদিন চিত্রা নদীতে ১০ থেকে ১২ টন আবর্জনা নিক্ষিপ্ত হয়।
২০২১ সালের জুলাই থেকে শুরু করে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচির আওতায় বর্জ্য অপসারণের কাজ চালু হয়। তবে এখন পর্যন্ত এই কার্যক্রমের স্বাভাবিকতা ব্যাহত হচ্ছে প্রয়োজনীয় পরিবহন বা গাড়ির অভাবে। উপজেলা পরিষদের জন্য এই বর্জ্য অপসারণের জন্য একটি গাড়ি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচে তৈরি করা হয়। এই গাড়ির মাধ্যমে চারজনের একটি টিম কাজ করে থাকে, যাতে রয়েছে মোঃ হাবিবুর রহমান, ড্রাইভার মোঃ ওয়াবায়দুল শেখ এবং পরিছন্নতাকর্মী রফিকুল ইসলাম ও হোসেন তালুকদার। এই দলে প্রত্যেকের বেতন মাসে ২৯ হাজার টাকা। তার সঙ্গে ড্রাইভারের জন্য মাসিক ৯,৫০০ টাকা ডিজেল ও মবিলের খরচ যোগ হয়। গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও খরচ হয়। প্রতিমাসে এই গাড়ি থেকে ৩৬ হাজার টাকা আদায় হয়, যা বিভিন্ন দপ্তর ও জনগণ থেকে সংগ্রহ করা হয়। তবে বর্তমানে ড্রাইভার ও কর্মীদের তিন মাসের বেতন বেশ কিছু বকেয়া রয়েছে। এর ফলে গ্রাহকরা সচেতন হলেও সরকারি সহায়তা না থাকলে এই পরিষেবা সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
চিতলমারী বাজারের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দা সেতু কর্মকার, ননী গোপাল কর্মকার, গৌর সুন্দর ঘোষ, মোঃ নজরুল মীর ও মোঃ মাসুদ গাজী জানান, আগে তার পরিবারজনের আবর্জনা নিয়ে বড় দুর্ভোগে পড়তে হতো। তবে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু হওয়ায় তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। তারা বলেন, এখন যদি এটি অব্যাহত থাকে, আমরা খুবই উপকৃত হবো।
স্কুল শিক্ষক মোঃ সাফায়েত হোসেন বলেন, বর্জ্য হচ্ছে কঠিন, তরল, গ্যাসীয়, বিষাক্ত ও বিষহীন ধরনের। জীববৈচিত্র্য রক্ষা, রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। তাই এই কার্যক্রম চালু থাকা খুবই জরুরি এবং এ ব্যাপারে সবদিক থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রয়োজন।