শনিবার, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত করবে কমিশন: আলী রীয়াজ

আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে Julho সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারকে পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ দেবে বাংলাদেশ কমিশন। এই বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার ব্রিফিংয়ে কথা বলেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। তিনি জানান, সব রাজনৈতিক দল আগামী শুক্রবার এই সনদে স্বাক্ষর করবে। তবে, কেউ চাইলে কমিশনের মেয়াদে অন্য কোনো দিনেও স্বাক্ষর সম্পন্ন করতে পারবেন। আশা করেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সংসদ ভবনের এলডি হলে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ও অবস্থা তুলে ধরে এই ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টার ফল হিসাবে শুক্রবার এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। এতে সমস্ত প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন। গত এক বছর ধরে দলের সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ৮৪টি বিষয়ে একমত হয়েছে, তবে কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট বা মতভিন্নতা রেখেছে। এর পরেও নানা মতভেদ সত্ত্বেও এগোতে সক্ষম হয়েছে দলগুলো। ভবিষ্যতেও এই আলোচনা ও সমন্বয় চালিয়ে যেতে চান তারা। তিনি উল্লেখ করেন, এই সনদের বাস্তবায়নে যাতে কোনও রকম ব্যত্যয় না ঘটে, সেজন্য তৎপরতা চালানো হচ্ছে। সব পক্ষের ত্যাগ ও অবদানগুলোর জন্য তাদের প্রশংসা করেন তিনি।

অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, এই প্রক্রিয়া এখানেই শেষ নয়, বরং সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। আরও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা চালিয়ে যাবেন তারা। সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন নতুন এই যাত্রায় অংশ নিতে, কারণ এই আন্দোলন ও প্রক্রিয়া সাধারণের জন্য। যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ দায়িত্বও অনুভব করেন তিনি।

তিনি জানান, আগামীকাল অঙ্গীকারনামায় প্রথমে স্বাক্ষর করবেন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা, এরপর কমিশনের সদস্যরা, এবং শেষে প্রধান উপদেষ্ঠা স্বাক্ষর করবেন। এর মাধ্যমে এই স্বাক্ষর কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে তারা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।

এ ছাড়াও, ৩ হাজার পৃষ্ঠার ৮ খণ্ডের সামগ্রী সংশ্লিষ্টদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। শেষমেশ পুরো সনদ ও এর আইনি ভিত্তির ওপর একটি শক্তিশালী প্রমাণ হাজির থাকবে, যা কোনও বিকল্প নেই।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এনসিপি যদি সনদে স্বাক্ষর না করে তবে তার বিষয়ে আমরা গভীরভাবে দেখছি। কারণ তারা দীর্ঘদিন এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সেনেটের বৈঠকেও অংশগ্রহণ করেছেন। আশা করি, তারা এই বিষয়ে আসবেন।

বড় রাজনৈতিক দলগুলো যদি দেশের স্বার্থে নিজেদের মতামত না দেন, তাহলে বিষয়টি রাজনৈতিক পর্যায়ে থাকবে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, সবাই দায়িত্বশীল হয়ে নিজস্ব ভাবনা ও সিদ্ধান্ত নিবেন। আইনি প্রক্রিয়ায় এই সকল মতামত বিবেচনা করে সফলতা সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি।

বিএনপি, জামায়াত ও বাম দলগুলো কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন, যা নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবুও, তারা আসার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

যদি সব দল স্বাক্ষর না করে, তবে ভবিষ্যতে কী হবে— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় প্রতিটি দলের মতামতের গুরুত্ব রয়েছে। এর জন্য গণভোটের আইনি ব্যবস্থা রয়েছে। পরবর্তী সময়ে সংসদেও কিছু গঠনমূলক ক্ষমতা থাকবে। দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অ-আনুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হবে।

সম্মেলনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, এই ঐক্য ও consensus বাংলাদেশের ইতিহাসের বিরল ঘটনা। Julho সনদের স্বাক্ষর সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণের আয়োজন, যা একটি ডকুমেন্টারিও দেখানো হবে। তিনি জানান, এই সনদ দেশের ভাগ্য পরিবর্তন আনবে বলে আশা করি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি উৎসবমুখর পরবর্তী নির্বাচন দিকে এগিয়ে যাবে। স্বাক্ষর অনুষ্ঠান যেন স্মরণীয় হয়ে ওঠে, সেই প্রত্যাশাতেও তিনি আত্মবিশ্বাসী।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।