বাসায় অবরুদ্ধ করে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে দুষ্কর্মের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর-gকর্তৃপক্ষ গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেছেন। ২৯ নভেম্বর ডেমরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মুরাদ হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিভাগে কর্মরত উপপরিদর্শক ইলামনি আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) জানান, এই বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর আদালত এই অভিযোগ পত্রের শুনানি করবে, যা পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে পাঠানো হবে।
নোবেলের আইনজীবী মোসতাক আহমেদ প্রকাশ করেন, এই মামলার বাদীকে তিনি বিয়ে করেছেন। তাদের সংসার নিয়মিত চলছে।
২০২৩ সালের ১৯ মে ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন এবং পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর আসামিকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার শর্তে বিয়ে করেন নোবেল। ১৯ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে ১০ লাখ টাকার দেনমোহরে তিনি আবারও ওই ছাত্রীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
মামলা থেকে জানা যায়, নোবেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচিত হন। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে নভেম্বর ১২, ২০২৪ তারিখে নোবেল তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ওই ছাত্রীকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তাকে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও অর্থ ছিনিয়ে নেন, এবং ধর্ষণ করেন। সেই সঙ্গে ভিডিও ধারণ করেন। যদি তার অনুঅযোগী না হন, তাহলে এই ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে ডেমরার সেই বাসায় আটকে রাখা হয়, প্রায়ই মারধর করা হয়। নোবেল দু-জনের সহায়তায় তাকে চুল ধরে টেনে একটি কক্ষে আটকে রাখতেন। ঘটনা ভিডিও করলে পরিবারের লোকজন শনাক্ত করতে পারেন, এই ভয়ে পরিবারের সহায়তায় ওই তরুণী ১৯ মে উদ্ধার করেন এবং পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার করে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, নোবেল তাকে আটক করে ধর্ষণ করেন এবং সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। বাসার বাইরে থাকলে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নানা সময় তাকে মারধরও করেন।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বর্তমানে নোবেল জামিনে থাকলেও, তদন্ত চলমান রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বাদীকে মারধর ও ধর্ষণে অন্য কেউ সহযোগিতা করেছেন, তবে তাদের নাম-ঠিকানা এখনও জানানো যায়নি। শীঘ্রই এ বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করে সম্পূরক অভিযোগ দাখিল করা হবে।
অর্থাৎ, এখন কী হবে? নোবেলের আইনজীবী বলছেন, তিনি ইতোমধ্যে বাদীকে বিয়ে করেছেন এবং সংসার চালাচ্ছেন, তাই এই মামলার ফলাফল তার জন্য খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। আদালত যদি বাদীর আপসনামা গ্রহণ করেন, তাহলে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে যাবে এবং নোবেল খালাস পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এই গায়ক ‘সা রে গা মা’ নামের একটি ভারতের সংগীত প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। এর আগে মাদকাসক্ত হয়ে সংগীত ছাড়ার কথা বললেও, দীর্ঘ বিরতির পরে আবার গানের জগতে ফিরে আসেন। এর মধ্যে ওই বছর তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা ও অন্যান্য নানা ঝামেলা দেখা গিয়েছিল। ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬ এর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে এক লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়ার বরখাস্তের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে বেশ কয়েকটি মামলায় তিনি জেল খাটেন ও পরে আপসের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পান।





