গত নভেম্বরে দেশের সড়ক ও নৌপথে মোট ৫৩৪টি দুর্ঘটনা ঘটে, যার ফলে ৪৮৩ জন মানুষ প্রাণ হারান এবং ১৩১৭ জন আহত হন। আহত ও নিহতের মধ্যে নারী, শিশু এবং পথচারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে ৬৪ জন নারী ও ৭১ জন শিশু রয়েছে। দুর্ঘটনার বেশির ভাগই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, যেখানে ২২৭টি ঘটনায় ১৯৪ জন নিহত হন। পাশাপাশি, পথচারীরাও দুর্ঘটনায় বেশ বিপদের মধ্যে পড়েছেন। এই মাসে ১০৬ জন পথচারী মারা যান। অন্যান্য দুর্ঘটনা হিসেবে আওয়ামী নৌ-দুর্ঘটনা দেখা গেছে ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া, ৪৭টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ও ৯ জন আহত হন।
অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে ১৩.২২ শতাংশ, যেখানে প্রতি দিন গড়ে নিহতের সংখ্যা ছিল ১৪.২২ জন। নভেম্বর মাসে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬.১ জন। এসব তথ্য রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের প্রেরিত প্রতিবেদনে পাওয়া যায়, যা৯টি প্রধান দৈনিক ও অনলাইন মিডিয়া ও নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনার প্রকারভেদে জনবল ও যানবাহনের বিবরণ বেশ বিস্তৃত। মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৯৪ জন, বাসের যাত্রী ২৪ জন, ট্রাক ও অন্যান্য ভারি যানবাহনের লোকজন ২২ জন, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের যাত্রীরা ১৪ জন, তিন হোইলারে ৮৩ জন, স্থানীয় যানবিশিষ্ট ৩১ জন এবং রিকশা ও বাইসাইকেল আরোহী ৯ জন ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দুর্ঘটনাগুলোর বেশিরভাগই জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কে ঘটেছে। সাধারণত মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিয়ন্ত্রণ হারানো, পথচারী চাপা দেওয়া বা যানবাহনের পেছনে আঘাতের ঘটনা বেশি। দেশের বিভাগ-wise হিসেবে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও হতাহত ঘটেছে, যেখানে ১৪১টি দুর্ঘটনায় ১১৯ জন প্রাণ হারান। প্রান্তিক অঞ্চলে কেবল শেরপুর ও পঞ্চগড় জেলায় কম সংখ্যক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি দেখেছি।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও সড়ক, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও মানসিক অসুস্থতা, অব্যবস্থাপনা, যানবাহনের ধীরগতি, তরুণ চালকের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, আন্দোলনমূলক আচরণ এবং ট্রাফিক আইনের অনুপযুক্ততা। পাশাপাশি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং চাঁদাবাজিও বড় সমস্যা।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির জন্য সুপারিশে থাকছে, দক্ষ চালক তৈরি ও প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়া, চালকদের বেতন ও কাজের সময় নির্ধারিত করা, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, মহাসড়কে আলাদা পার্শ্ব রাস্তা ও রোড ডিভাইডার নির্মাণ, চাঁদাবাজি বন্ধ ও ট্রাফিক প্রশাসনের সক্ষমতা বাড়ানো। আরো বলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, গণপরিবহনের চাঁদাবাজি রোধ, রেল ও নৌপথ সংস্কার করে সড়ক চাপ কমানো এবং টেকসই পরিবহন কৌশল গ্রহণ ও প্রয়োগ করতে। এক সাথে সড়ক পরিবহন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হয়।





