সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দেশে ফিরে হোটেলে রওশন, বিমানবন্দরে শোডাউন, দলে আবারও অনৈক্যের বার্তা

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে প্রায় আট মাস চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চিফ প্যাট্রন রওশন এরশাদ। আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ হলেও তিনি এখনো বেশ দুর্বল, নিজ থেকে হাঁটাচলা করতে পারেন না, হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হচ্ছে। গতকাল সোমবার দুপুরে দেশে ফিরে তিনি গুলশানের বাসায় ওঠেননি। বিমানবন্দর থেকে তাকে সরাসরি গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে নেওয়া হয়েছে। আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত তিনি সেখানেই থাকবেন। ৪ জুলাই সংসদের চলমান অধিবেশন শেষে তিনি চেকআপের জন্য আবারও ব্যাংককে যাবেন।

জানা গেছে, রওশন এরশাদ আগামী ৩০ জুন সংসদের বাজেট অধিবেশনে অংশ নিতে চান। ঐ দিন ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে, সেদিন রওশন বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখতে পারেন। এছাড়া আগামী ৪ জুলাই তিনি আবারও সংসদে যেতে পারেন, সেদিন অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য দিতে পারেন। রওশনের সঙ্গে ব্যাংকক থেকে তার পুত্র রাহ্গীর আল মাহি (সাদ) এরশাদ এমপি এবং সাদের স্ত্রী মাহিমা এরশাদও দেশে ফিরেছেন। এছাড়া রওশনকে সার্বক্ষণিক দেখাশোনার জন্য বামরুনগ্রাদ হাসপাতাল থেকে একজন নার্সও এসেছেন।

রওশন গতকাল দুপুরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ডসহ দলটির কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিমানবন্দর সড়কে বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার নিয়ে অবস্থান নেন। তারা মিছিল নিয়ে রওশন এরশাদকে স্বাগত জানান। এ সময় বিমানবন্দর সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।

জি এম কাদের ছাড়াও রওশন এরশাদকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে আরো উপস্থিত ছিলেন জাপার কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও সালমা ইসলাম; প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, ফখরুল ইমাম, মসিউর রহমান রাঙ্গা, সুনীল শুভ রায়, নাসরিন জাহান রত্না, মীর আবদুস সবুর আসুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া; পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের, রওশন আরা মান্নান এমপি, বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ এবং জাপার কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আশিক আহমেদ প্রমুখ। হোটেল ওয়েস্টিনে বিরোধীদলীয় নেতাকে স্বাগত জানান ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট’-এর চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশিদ।

প্রসঙ্গত, ফুসফুসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের ১৪ আগস্ট রওশন এরশাদকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানে টানা ৮৫ দিন চিকিৎসার পরেও অবস্থার অবনতি ঘটলে গত বছরের ৫ নভেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

মুমূর্ষু রওশনকে ব্যাংককে নিয়ে যাওয়ার দিন জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ছাড়া দলের আর কাউকে সেদিন বিমানবন্দরে দেখা যায়নি। এমনকি ব্যাংককে প্রায় আট মাস চিকিৎসাধীন থাকলেও প্রথম কয়েক মাসে দলের তেমন কোনো নেতা তাকে দেখতে যাননি, জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ কয়েক জন ছাড়া অন্য কেউ ফোনেও খোঁজ নেননি। গত ২৩ জুন তাকে দেখতে ব্যাংককে যান জি এম কাদের ও চুন্নু। জাপার এমপি সেলিম ওসমান সস্ত্রীক গিয়ে দেখে এসেছেন রওশনকে। এছাড়া এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা ব্যাংককে গিয়ে রওশনকে দেখে এসেছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশিদ একাধিকবার রওশনকে দেখতে ব্যাংককে যান।

তবে রওশন দেশে ফেরার পর পালটে গেছে দৃশ্যপট। দলের নেতাকর্মীরা ঝাঁকে ঝাঁকে উপস্থিত হয়েছেন বিমানবন্দরে। জাপার দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেই মূলত এই শোডাউন করা হয়েছে। নির্বাচনে রওশনের সুদৃষ্টি ও আশীর্বাদ পেতে প্রত্যাশীরা হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক নিয়ে বিমানবন্দরে হাজির হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে দলটিতে আবারও অনৈক্যের বার্তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অবশ্য, জাপার দায়িত্বশীল একাধিক নেতার মতে, ভোট ঘনিয়ে এলেই জাপার অভ্যন্তরে বিভক্তিরেখা দেখা দেয়, এটা জাপার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির চিরচেনা ছবি।

জাপার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে ফিরে রওশন এরশাদ আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন। দেশবাসীসহ নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান তিনি। এছাড়া যারা দোয়া করেছেন, তাদেরও ধন্যবাদ জানান। সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দেশ গঠনে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, সেই দোয়া করেন রওশন।