সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দেশের জন্য ক্ষতিকর চুক্তি বাতিলের দাবি করা হয়েছে

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে একত্রিত হয়েছিলেন দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা। বৈঠক থেকে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়। ভারতের এসব অপপ্রচারকে শক্তিশালী ও বেগবানভাবে মোকাবিলা করার কথা বলেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমির সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের আলোচনার বিভিন্ন দিক জানান আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, বৈঠকে আমাদের প্রবাসী, সহযোগী বন্ধুরাষ্ট্র এবং বিদেশি সাংবাদিকদের দেশে নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ ও আইনি দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে সেটা প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, রামপালসহ বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর যেসব চুক্তি রয়েছে সেগুলো বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের যে অর্থনৈতিক নিপীড়ন, সাংস্কৃতিক আধিপত্য, অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানোর চেষ্টা সেটার নিন্দা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ভারতকে বাংলাদেশের প্রতি মর্যাদাশীল এবং সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশ বিরোধী যে অপপ্রচার চালাচ্ছে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের সব সম্প্রদায়ের ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে। একই সঙ্গে যে কোনো উসকানির মুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।

বৈঠকের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, সবাই একটা কথা বলেছেন, আমাদের আর শক্তিহীন, দুর্বল, নতজানু ভাবার কোনো অবকাশ নেই। যেকোনো ধরনের অপপ্রচার এবং উসকানির বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং আমাদের ঐক্য অটুট রাখব। আমরা সাহসী থাকব, ভবিষ্যতে যেকোনো অপপ্রচার বা উসকানি দিলে আমরা আমাদের ঐক্যকে আরো বেগবান রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।

আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তাব আকারে এসেছে— গোটা জাতি ভারতের অপপ্রচার বিরুদ্ধে যে ঐক্যবদ্ধ আছে; সবাই মিলে একটা সমাবেশ করতে পারি কি না, সবাই মিলে পলিটিক্যাল একটা কাউন্সিল করতে পারে কি না, নিরাপত্তা কাউন্সিল করতে পারে কি না; এজন্য প্রস্তাবনা এসেছে। আমাদের মধ্যে মত-পথ ও আদর্শের ভিন্নতা থাকবে, আমাদের রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকবে, অবস্থার ভিন্নতা থাকবে; কিন্তু দেশ, সার্বভৌমত্ব এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে আমরা সবাই এক। সবার উপরে দেশ, এটা থেকে আমরা কখনো বিচ্যুত হবো না। বাংলাদেশকে দুর্বল, নতজানু, শক্তিহীন ভাবার কোনো অবকাশ নেই।

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠকে অংশ নিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন; ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ; গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি; গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর; বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক।

বৈঠকে আরও অংশ দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমার ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ চারজন; খেলাফত মজলিসের আমির আব্দুল বাসিদ আজাদ, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন; রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম; জমিয়তে উলামে ইসলামের সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ ইউসুফি ও মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেনদি।