শনিবার, ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে কংগ্রেস কার্যালয়ে বিজেপির হামলা ও সংঘর্ষ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার রাজ্যে কংগ্রেস কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই হামলার পেছনে মূল কারণ ছিল বিজেপি কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও উত্তেজনা, যা মূলত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার প্রয়াত মাকে নিয়ে অশালীন মন্তব্যের জের ধরে সৃষ্টি হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে ভিডিও ফুটেজ দেখা গেছে, যেখানে দেখা যায় দুই দলের কর্মীরা নিজেদের দলীয় পতাকার ডাণ্ডা দিয়ে একে অপরকে মারধর করছেন। এই সংঘর্ষে বেশ কিছু নেতৃত্ব ও সাধারণ কর্মী আহত হয়েছেন। তবে এখনো কোনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। কংগ্রেস এতে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয়, যখন দরভাঙায় এক ব্যক্তি ভোটার অধিকারের ‘যাত্রা’ চলাকালীন কংগ্রেসের পতাকা গায়ে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় তরজা করে। এই ঘটনা সরাসরি ভিডিওতে ধরা পড়ে, যা পরবর্তীতে ভাইরাল হয়। এর জেরে বিজেপি থানায় এফআইআর দায়ের করে ও কংগ্রেসের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়।

দরভাঙা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হয়েছে। এক্স-এ দারভাঙা পুলিশ লিখেছে, ‘সিমরি থানায় একটি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

বিহারেও এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি ছড়িয়ে পড়ে। পাটনা শহরে শুক্রবার বিজেপি রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়। সেই সময় কংগ্রেস সমর্থকরাও উত্তেজিত হয়ে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায় এবং মারপিট শুরু হয়। পুলিশ বিশাল সংখ্যক বাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি সমঝোতা করার চেষ্টা করে, তবে শহরের অবস্থা এখনও উত্তপ্ত।

অপর দিকে, কলকাতার জাতীয় কংগ্রেসের অফিসের সামনে শুক্রবার এক বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সেখানে বিজেপির কিছু সমর্থক কংগ্রেস দপ্তরে ঢুকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালানোর অভিযোগ উঠেছে। তারা রাকেশ সিংয়ের নেতৃত্বে মুখোশে থাকা কয়েকজন ভবনের বাইরে ভাঙচুর করে। তাদের হাতে নাচে থাকা রাহুল গান্ধীর ছবি ও ব্যানার দেখতে পাওয়া গেছে। এ ঘটনা তীব্র নিন্দা জানিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। অভিযোগ দায়ের হয়েছে এন্টালি থানায়।

প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, ‘রাজনীতিতে যারা দেউলিয়া, তাদের এই ধরনের কাজ করার সাহস হয় না। একমাত্র বিজেপির নেতা-নেত্রীরা নিজেদের চুরি ও দুর্নীতির রঙ ঢাকতে এইসব অপকর্ম করে। তারা আমাদের দলের ওপর রাগ প্রকাশ করছে, যখন পুরো দেশ জুড়ে তারা নানা দুর্নীতির অভিযোগে ধরা পড়ছে। এই ঘটনার জন্য প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

বিহার কংগ্রেসের নেতা অশুতোষ অভিযোগ করেছেন, এই ঘটনায় সরকারের মদদ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘নীতীশ কুমার ভুল করেছেন, আমরা এর জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’

অপর দিকে, বিজেপি নেতা নীতিন নবীন হুঁশিয়ারি দেন, ‘মায়ের অপমানের বদলা বাংলার প্রতিটি ছেলে বিজেপিকে দেবে। এর জবাব আমরা অবশ্যই দেব।’

স্বরաստ্রমন্ত্রী অমিত শাহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কঠোর ভাষায় নিন্দা প্রকাশ করে লেখেন, ‘রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের রাজনীতি অতি নিচে নেমে এসেছে। একজন গরিব মায়ের সন্তান ১১ বছর ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রী, তাকে অপমানের এই ভাষা মানা যায় না। এটি লজ্জাজনক এবং গণতন্ত্রের প্রতি কলঙ্ক।’

বিজেপির সভাপতি জে পি নাড্ডা বলেছেন, ‘এ ধরনের অশালীন আক্রমণ সীমা লঙ্ঘন করেছে। রাহুল গান্ধী ও তেজস্বী যাদবের উচিত ক্ষমা চাওয়া।’

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও এ ঘটনাকে অবজ্ঞা করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও তার প্রয়াত মায়ের বিরুদ্ধে এই ধরনের অশ্লীল মন্তব্য অবশ্যই নিন্দনীয়। আমি এর কড়া প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’