থাইল্যান্ডের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পেতোংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে দেশের সাংবিধানিক আদালত ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে তার বিরোধপূর্ণ একটি ফোনকলের রেকর্ড, যেখানে তিনি কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে কথা বলতেন। এই ফোনকলের রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পরই তার সরকারে অবনতি ঘটে এবং আদালত তার পদ স্থগিত করে। আজ, শুক্রবার ২৯ আগস্ট, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে তাকে সম্পূর্ণরূপে ক্ষমতাচ্যুত করা হলো।
পেতোংতার্ন ২০২৪ সালের আগস্টে দেশের সবচেয়ে কম বয়সে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩৩ বছর। এক বছরের মধ্যে তিনি ক্ষমতা হারালেন, যা ইতিহাসে বিরল ঘটনা। তিনি একজন প্রভাবশালী নারী নেতা এবং সিনাওয়াত্রা পরিবারের সদস্য।
ফোনকলের রেকর্ডে দেখা যায়, পেতোংতার্ন তাকে কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে ‘আঙ্কেল’ বলে সম্বোধন করেন। সেই সময় তিনি তার দেশের সেনাবাহিনী নিয়ে সমালোচনা করে বলেন, দেশের সেনাদের জন্যই কম্বোডিয়ার এক সেনা নিহত হয়েছে। এই ফোনকল প্রকাশ পেতেই ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এর কয়েক মাসের মধ্যেই, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছে।
১৫ জুনের ওই ফোনকলের মধ্যে আরও বলা হয়, ‘যেকোনো কিছু চাইলে আমাকে বলবেন। আমি বিষয়টি দেখব।’ এই কথাটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। দরবারে এই ফোনকলের রেকর্ড ভাইরাল হওয়ার সময় দুই দেশের সীমান্তে কঠোর উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ সময় স্বাভাবিকভাবেই জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদও বাড়তে শুরু করে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়, বিরোধী দল অভিযোগ তোলে যে, পেতোংতারা গোপনে তাদের স্বার্থে কাজ করছেন। তখন তিনি জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন এবং বলেন, এই ধরনের কথোপকথন তিনি উত্তেজনা প্রশমনের জন্য বলেছেন।
রায় ঘোষণা শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পেতোংতার্ন বলেছিলেন, তিনি দেশের স্বার্থে কাজ করেছেন। তিনি দাবি করেন, তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল দেশের মঙ্গল, কোনও ব্যক্তিগত লাভ নয়। তিনি আরও বলেন, আমি দেশের নাগরিক ও সেনাদের রক্ষা করতে চেয়েছি। এই রায় থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে নতুন পরিবর্তনের সূচনা করেছে, যেখানে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
তবে, গত ১ জুলাই আদালত তার প্রধানমন্ত্রীর পদ স্থগিত করে দেয়, যদিও তিনি এখনও সংস্কৃতি মন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন। ২০০৮ সালের পর, এটি পঞ্চমবার যখন থাইল্যান্ডের মূল ক্ষমতাধর নেতাদের মধ্যে কেউ না কেউ আদালতের রায়ে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা সার্বিকভাবে দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ছাপ ফেলেছে।