জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের জন্য ব্যাপক শুভেচ্ছা ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রস্তুতি চললেও, এক বার আবার নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ ৩৩ বছর পরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়, যা নির্বাচনের পরিপূর্ণতা এবং শান্তিপূর্ণ আয়োজনের জন্য উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এক শিক্ষার্থী সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট দায়ের করেন, যার ফলে নির্বাচন স্থগিতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে আদালত এখনও শুনানির দিন নির্ধারণ করেনি, আর এর কারণের বিস্তারিতও জানানো হয়নি। এই খবর প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রজগতে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ও সংগঠন আশঙ্কা করছেন, এই রিটের ফলে সাধারণত দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল সেই নির্বাচন আবার পিছিয়ে যেতে পারে। ২০২১ সালে ৯১ বছরের সূচনায় এই বিশ্ববিদ্যালয় পৃথকভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করছিল। যদিও, চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করা হয়নি, তবে প্রাথমিকভাবে নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ইতিমধ্যে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু, পোস্টারিং চলমান ও ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বামপন্থী জোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বৈষম্য ও সামাজিক অন্যায় বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেক শিক্ষার্থীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যোগ দিয়েছেন। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করতে প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং অফিসার এ কে এম রাশিদুল আলম জানিয়েছেন, অপ্রিয় পরিস্থিতি এড়াতে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, সব ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে। ১৯৯২ সালে সর্বশেষ জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা প্রায় তিন দশক আগে। তার পর থেকেই, ১৯৯৩ সালের এক ছাত্র বহিষ্কারের ঘটনায় আন্দোলন দমন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জাকসু ও হল সংসদকে বাতিল করে দেয়। এরপর থেকে আর কোন নির্বাচন হয়নি। তবে এই দীর্ঘ বিরতিতে, ৯ বার এই নির্বাচনের আয়োজন হয়েছিল। অন্যদিকে, হাইকোর্টে রিট দায়েরের কারণে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও, অনেকের ধারণা যদি রিটের মাধ্যমে কোনও আইনি ত্রুটি পাওয়া যায়, তা সংশোধনের সুযোগও তৈরি হতে পারে। আবার অনেকে এটিকে একটি সুপরিকল্পিত কৌশল হিসেবেও দেখছেন যা শুধু নির্বাচন পিছানোর জন্য। এর আগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনের সময়ও হাইকোর্টে রিট হয়েছিল। প্রথমে নির্বাচন স্থগিত হলেও, আদালত পরে সেই আদেশ স্থগিত করে দেয়, ফলে নির্ধারিত ৯ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সেক্ষেত্রে, এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছিলেন বামজোটের প্রার্থী ফাহমিদা আলম। এই সম্পূর্ণ পরিস্থিতি অনেকের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং ফলাফল এখন গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রজগৎই গ্রহণ করবে।
