শনিবার, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ স্বাক্ষর হবে ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদ

দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার ও পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রায় আট মাস ধরে চলা আলোচনা শেষে আজ শুক্রবার অবশেষে ঐতিহাসিক ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ স্বাক্ষর করা হচ্ছে। বিকেলে রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এই গুরুত্বপূর্ণ সনদে স্বাক্ষর করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সদস্যরা, পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দুইজন করে প্রতিনিধি।

অভূতপূর্ব এই উদ্যোগ শুরু হয় গত বছর আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর, যখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারমূলক কাজের সূচনা করা হয়। প্রথম ধাপে গঠিত হয় ছয়টি সংস্কার কমিশন (সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ), যারা তাদের প্রস্তাব নিয়ে দফায় দফায় দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে। প্রাণবন্ত আলোচনায় অংশ নেন ৮৪টি দলের প্রতিনিধিরা।

গত মাসগুলোর মধ্যে এর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়, যেখানে খসড়া জাতীয় ঐকমত্যের জন্য সংশোধন ও বিষয়াবলী চূড়ান্ত করা হয়। ১৬ আগস্ট এই খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়, তবে কিছু ত্রুটি থাকায় সংশোধন করে নতুন খসড়া পাঠানো হয়। এরপর ২০ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত দাপ্তরিক আলোচনা চলতে থাকে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক নেতৃবর্গ ও জটিল বিষয়াদি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও মতামত সংগ্রহের পর, সব ধরনের মতামত ও পর্যালোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সংস্কার প্রস্তাব তৈরি হয়।

গত ১৪ অক্টোবর এই চূড়ান্ত সংশোধিত সনদের এক কপি রাজনৈতিক দলের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বিচিত্র গণঅভ্যুত্থান ও আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের আকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের অঙ্গীকার হিসেবে এই সনদ গ্রহণ করা হয়। এতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, স্বচ্ছতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রধান উদ্দেশ্য হলো দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সরকার পতনের আন্দোলন ও অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের ফলে প্রাপ্ত জনাদ্বারা গৃহীত এই সনদকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া। এতে বলা হয় যে, এই সনদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা নাগরিকস্বার্থে জীবন্ত ও কার্যকর করার জন্য দ্রুত আইনগত ও সাংবিধানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সনদে উল্লেখ করা হয় যে, জনগণের এ স্বীকৃতি ও ঐকমত্যকে দেশের সংবিধানে যথাযথভাবে সংযুক্ত করা হবে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো দেশের শাসনব্যবস্থা ও নাগরিক অধিকার পুনঃস্থাপন বা শক্তিশালীকরণ, সংবিধান ও আইনি প্রক্রিয়া সংস্কার, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা।

অতীতে অনেক ষড়যন্ত্র ও অপপ্রয়াসের পরও বাংলাদেশিরা তাদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ও সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। জনগণের সাহস, উদ্দীপনা ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলস্বরূপ এই ঐতিহাসিক সনদ সম্পন্ন হলো এবং স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে তা কার্যকর করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে এক নব উদ্দীপনা, শুদ্ধতা ও গণতান্ত্রিক চেতনা পুনরুজ্জীবিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, এই সনদে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দল ও জোটের তালিকা বিভিন্ন দলীয় ও মতাদর্শভেদে বিশ্লেষণ করে উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা এই ঐকমত্যের অংশ। এর মাধ্যমে একটি নতুন বাস্তবতা, স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়েছে।