রোববার সকালে অন্যান্য সাধারণ দিনের মতোই ল্যুভর জাদুঘরের দরজা খুলে দেখানো হয়। তবে এই দিনে ঘটে যায় এক বিস্ময়কর চুরির ঘটনা, যা মাত্র সাত মিনিটে পুরোপুরি ঘটিয়ে ফেলেছেন চোরেরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই তারা কার্যক্রম সম্পন্ন করে চলে যায়, যা ছিল এক বিশিষ্ট সাহসী ডাকাতি।
সকালে ঢোকার আধা ঘণ্টা পরে, দুই চোর নির্মিত ভবনের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত বারান্দায় ওঠে। তারা ব্যবহার করে ট্রাকের ওপর বসানো বৈদ্যুতিক মই। সাধারণত এ ধরণের মই আসবাবপত্র তোলার কাজে ব্যবহৃত হয়, তাই পথচারীদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়নি। তারা এরপর দ্বিতীয় তলায় গিয়ে একটি জানালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। সাথে সাথে জারির নিরাপত্তা অ্যালার্ম বাজে।
অপরপ্রান্তে থাকা ঝলমলে গ্যালারিতে ঢোকার পরে চোরেরা বেশ কিছু মূল্যবান জিনিসের ওপর নজর দেয়। সেখানে রাখা ছিল রাজকীয় গয়না, মুকুট ও মূল্যবান হীরার সংগ্রহ, যা কাচের তাকের অন্তরালে সাজানো ছিল।
চোরেরা দ্রুত আড়ালে থাকা দুটি কাচের তাক ভেঙে ফেলে, যার ফলে আবার অ্যালার্ম বাজে। এ সময় তারা আটটি ঐশ্বরিক দ্রব্য নেয়, যার মধ্যে ছিল রাজকীয় নীলা নেকলেস, পান্না নেকলেস ও কানের দুল। তাদের মধ্যে আরো ছিল নেপোলিয়নের শাসনামলের ফ্রান্সের তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রীর ব্যবহৃত এক মুকুট।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই চুরির ঘটনা বেশ পরিকল্পিত ছিল এবং একটি সংঘবদ্ধ চক্র এর সঙ্গে জড়িত। সরকারি সূত্র জানায়, ৬০ জনের একটি দল এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। রাস্তায় ছিল চোর দলের অন্য কিছু সদস্য স্কুটার নিয়ে অপেক্ষায়, তারা চুরির সময়টিতে হঠাৎ নেমে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়। এই পুরো ঘটনাটি মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হয়।
ফ্রান্সের এই সাহসী চুরি কার্যকলাপকে দেশবাসী এবং জাদুঘর কর্তৃপক্ষ দারুণ চাপে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অধ্যায় ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বড় ক্ষতি। প্যারিসের মেয়র এরিয়েল ওয়েইল বলেছেন, আজকের ঘটনাটি যেন সিনেমার দৃশ্য না, বরং দিনের আলোয় বাস্তবে ঘটল এমন ঘটনা যা কল্পনাকেও হার মানায়। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই চুরি শুধু আর্থিক স্বার্থ নয়, এটি ফ্রান্সের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের লোপ।
চুরি হওয়া রত্নগুলোর মধ্যে রয়েছে তৃতীয় নেপোলিয়নের রাণী ইউজেনি’র টিয়ারা, যেখানে ছিল ২১২টি মুক্তা, প্রায় ২০০০ হীরক ও ৯৯২টি রোজ-কাট হীরা। এছাড়াও ছিল রাণী ইউজেনির বেল্ট বা কোমরবন্ধনী, যাতে ছিল ২৪৩৮টি হীরা ও ১৯৬টি রোজ-কাট হীরা। জাদুঘরে সংরক্ষিত অন্য এক বিশেষ অলংকার ছিল, ১৮৫৫ সালের রেলিকুইয়ারি ব্রোচ, যা ইউজেনির স্মৃতিচিহ্ন।
আরও ছিল ১৯শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে লুই বোনাপার্টের স্ত্রী রানি হরটেন্স ও রানি মেরি অ্যামেলির ব্যবহৃত কানের দুল। নির্মিত হয়েছিল ১৮১০ সালে, যেখানে ছিল ৩২টি পান্না ও ১১৩৮টি হীরা। এই গয়নার সেটটি নেপোলিয়ন তার জীবনভর তৈরি করেছিলেন, এর মধ্যে ছিল ওপাল দিয়ে তৈরি এক সেটও। চোরেরা সেই সেটের অংশ হিসেবে পান্না ও হীরার জোড়া কানের দুল নিয়েছে।
এটি ছিল ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে daring ও সাহসী চুরির ঘটনা, যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। দেশের বিভিন্ন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন হলফ করে, এই ধরনের ঘটনা পুরো দেশকে লজ্জান।