অন্য স্বাভাবিক দিনের মতোই রোববার সকালে দর্শনার্থীদের জন্য প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভর জাদুঘর খুলে দেওয়া হয়। তবে এর আধা ঘণ্টা পর ভবনের দক্ষিণ পাশে একটি অস্বাভাবিক দৃশ্য দেখা যায়, যেখানে দুই চোর চুপচাপ অবস্থান করছে। তারা দ্বিতীয় তলে উঠতে ট্রাকের উপরে বসানো বৈদ্যুতিক মোই ব্যবহার করে, যা সাধারণত আসবাবপত্র তোলার জন্য ব্যবহৃত হয়। পথচারীরা মনে করে এটি সাধারণ কোনও কাজ, তাই খুব বেশি সন্দেহ করেনি।
চোরেরা দ্রুত দ্বিতীয় তলায় উঠে একটি জানালা ভেঙে জাদুঘরে প্রবেশ করে। এর সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সতর্ক হয়ে যায়। তাদের লক্ষ্য ছিল অ্যাপোলো গ্যালারিতে, যেখানে রাজকীয় গয়না, মুকুট এবং মূল্যবান হীরার সংগ্রহের কাচের প্রদর্শনী ছিল। ওখানে পৌঁছে তারা প্রথমে দুটি কাচের তাক ভেঙে ফেলে, এর ফলে অ্যালার্ম বাজতে শুরু করে। এরপর তারা দ্রুত আটটি মূল্যবান বস্তু লুট করে নিয়ে যায়। এর মধ্যে ছিল রাজকীয় নীলা নেকলেস, পান্না নেকলেস, কানের দুল, এবং ১৯শ শতকের ফ্রান্সের শাসক তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রীর ব্যবহৃত একটি মুকুট।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রকাশনায় জানা গেছে, এই চুরির ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। গত রোববারের এই ঘটনা বিভিন্ন সংবাদসংস্থায় একে ডাকাতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে সোমবারের প্রতিবেদনে এটি চুরির ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়, পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং তারা ধারণা করছেন, এই ঘটনার সঙ্গে একটি পরিকল্পিত সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত।
পুলিশ জানায়, জাদুঘরটির দক্ষিণ দিকের সেইন নদীর পাশে কিছু চোরের দল অপেক্ষা করছিল। চোরেরা অ্যাপোলো গ্যালারিতে ঢোকার আগেই নিচে নেমে স্কুটার নিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে। পুরো এই ঘটনা মাত্র সাত মিনিটে শেষ হয়।
এটি ছিল ল্যুভর জাদুঘরে সংঘটিত সবচেয়ে সাহসী চুরির ঘটনা। ফ্রান্সের রাজনীতিবিদরা এই ক্ষতি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকের প্রশ্ন, কীভাবে এত বড় একটি ভবনে দিনের আলোয় এমন ঘটনা ঘটে গেল? প্যারিসের মেয়র এরিয়েল ওয়েইল বলেন, এটা কোনও কল্পনা বা সিনেমার দৃশ্য নয়। দিনের বেলা চোরেরা রাজমুকুটের রত্ন নিয়ে পালিয়েছে, যা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, এটি মহান ফ্রান্সের ঐতিহ্য ও গর্বের ওপর আঘাত।
চুরির হারানো রত্নের মধ্যে রয়েছে তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজেনির ঐতিহাসিক গয়না, যেখানে ছিল ২১২টি মুক্তা, ১,৯৯৮টি হীরক ও ৯৯২টি রোজ-কাট হীরা। সঙ্গে ছিল সম্রাজ্ঞীর বেল্টের মতো অলংকার, যা অলঙ্কৃত ফিতার ভিতরে ছিল অসংখ্য হীরা ও রোজ-কাট হীরা।
আরও পাওয়া গেছে ঐতিহাসিক কাচের ব্রোচ, যেটি ১৮৫৫ সালে তৈরি এবং ‘রেলিকুয়ারি ব্রোচ’ হিসেবে পরিচিত। চোরেরা অন্যান্য মূল্যবান গয়নার মধ্যে আধুনিক যুগের রাজপরিবারের ব্যবহৃত কানের দুল ও গয়না চুরি করেছে, যার বেশির ভাগই ছিল পান্না ও হীরা। নেপোলিয়নের বিয়ের সময় উপহার দেওয়া গয়নার সেটগুলো, যেমন পান্নার কানের দুল সহ, সব চোরেরা নিয়ে গেছে। এই চুরির ঘটনায় শুধু অর্থনৈতিক নয়, ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।